গল্প- অন্য খেলা

অন্য খেলা
-শুভায়ন বসু

 

“সুদীপ,প্লিজ আজ আর এরকম দুষ্টুমি কোরোনা।” মিষ্টি কাতর স্বরে বলে ওঠে।সুদীপ হেসে বলে “আরে না না, কিচ্ছু করবো না। এত ভয় পাও কেন বলতো? আমি তো আছি।” “না গো, আমার বুকটা না একেবারে ধড়াস ধড়াস করে। আমি সহ্য করতে পারিনা। তুমি জানোতো।”
আসলে সুদীপ ইচ্ছে করে ক্রিকেট কোচিং মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় বাইকের হেডলাইটটা হঠাৎ নিভিয়ে দেয়। সন্ধ্যাবেলায় এই জায়গাটা এমনিতেই প্রায় অন্ধকার থাকে, স্ট্রীট লাইটের বালাই নেই। স্কুল বাড়িতে শুধু একটা টিমটিমে আলো জ্বলে। ক্রিকেট কোচিং মাঠ আর ওপাশের ঘন গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ সুন্দর একটা মায়াবী রাস্তা। এটা খুবই পছন্দ করে সুদীপ, সন্ধ্যার পর হলেও। হেড লাইট নেভাতেই , চারপাশে ঘুটঘুটে ঘন অন্ধকার ওদের ঘিরে ধরে। পিছনে বসে মিষ্টি আর্তনাদ করে ওঠে, সুদীপকে প্রাণপনে জড়িয়ে ধরে। কয়েক সেকেন্ড। আবার হেড লাইটটা জ্বেলে দেয় সুদীপ, বাকি রাস্তাটা আলোতে আরামে পেরিয়ে যায়। মিষ্টি তখনও সুদীপকে খামচে ধরে থাকে।
সুদীপ মিষ্টির প্রেমটা বেশ ক’বছরের পুরোনো। তবুও ওদের দুষ্টুমি, খুনসুটি চলতে থাকে, পুরোনো হতে দেয় না ওদের দু’জনের জাগতিক চাওয়া-পাওয়াকে। প্রতিদিনই ওরা যেন নতুন করে কিছু না কিছু আবিষ্কার করে একে অপরের মধ্যে। বিকেলে যেদিন একটু বের হতে দেরী হয়ে যায়, লেকের ধারে ওদের প্রেমপর্ব সেরে ফিরতেও সেদিন সন্ধ্যা হয়ে যায়। আর বাইকে সুদীপ এই নির্জন রাস্তাটা সেদিন ধরবেই, মিষ্টির শত অনুনয়-বিনয় সত্ত্বেও। আর একবার হেডলাইটের আলোটাও কয়েক সেকেন্ড নেভাবেই। তখনই অন্ধকারে ভয়ে, মিষ্টি সুদীপকে প্রাণপনে জড়িয়ে ধরবেই। এমনটা ওদের মাঝে মাঝেই হয়।
কিন্তু সেদিন যেন মিষ্টি একটু বেশিই কাতর অনুনয় বিনয় করছিল ফেরার সময় ।সন্ধ্যা অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, ক্রিকেট কোচিং মাঠের ধারের সেই রাস্তাটা আজকে কিছুতেই ধরতে দেবে না মিষ্টি। কিন্তু সুদীপের গোঁ, এটাই ওর খেলা, এটাই মজা। এই যে মিষ্টির ভয় পাওয়া আর জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করা এটাই ওর সুখানুভব। তাছাড়া ঘুরে গেলে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়ে যাবে, দু’জনকেই কথা শুনতে হবে।
” প্লিজ, প্লিজ, সুদীপ,আলো নিভিয়ো না আজ। দোহাই তোমার” মিষ্টির এত অনুরোধ সত্বেও সুদীপ সেদিনও যথারীতি হেডলাইটের সুইচটা বাঁ হাতের আঙুলে টুক করে নিভিয়ে দিল। চারদিকে অমনি নিকষ কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু সেদিন এ কি হল? সুদীপের এমন অভিজ্ঞতা তো কখনো হয়নি! মিষ্টির চিৎকার নেই, প্রানপনে জড়িয়ে ধরা নেই, কি ব্যাপার? মিষ্টি কি আজ ভয় পায়নি? আলোটা কয়েক সেকেন্ড নেভানো, বাইকটা ঠিক রাস্তায় আস্তেই চলছে ।হঠাৎ সুদীপ অনুভব করল, অন্ধকারে সাদা মতো একটা কাপড় যেন ওর মাথার উপর দিয়ে উড়ে পেছনে চলে গেল। ততক্ষণে কিছুটা এগিয়ে এসেছে এবার আলোটা জ্বালতেই হবে, নইলে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। অন্ধকার আর রাস্তার ঠাহর হয় না। কিন্তু সুইচ দিতেও হেড লাইটের আলো জ্বললো না। পাগলের মত আরও দু-তিন বার সুইচটা মেরেও হেড লাইট না জ্বলায় ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো সুদীপ। রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। তখনই হেডলাইটটা জ্বলে উঠলো, কিন্তু আলোর জোর এত কম কেন? পিছনে ঘুরে সুদীপ দেখে মিষ্টি নেই, কেউ কোথাও নেই। অজানা একটা রাতপাখির ডাক আকাশ চিরে অন্ধকারে খান খান হয়ে যায়।

Loading

Leave A Comment